রাত্রিখোর
বৃক্ষেরও বসন্ত আছে
জোয়ারে নদীর যৌবন
আমার কেবলই ঝরে যাওয়ার গল্প
যোগের খাতায় বিয়োগান্ত জীবন
প্রতিনিয়ত সবুজের মৃত্যু হলে
নিভে এলে সূর্যবাতি–
জেগে উঠি নিঃসঙ্গ রাত্রিখোর
আঁধারে আঁধার ঘষে দুঃখ খেয়ে বাঁচি!
চুলের আলো
চুল হলো তার রূপের বাগান
চুলই রূপের মণি,
মাথা জুড়ে সে গড়েছে
কালো আলোর খনি।
রূপ ঝলমল রাজকন্যার
চুল ছিলো তার বেশ,
কিন্তু এখন নেইকো টিকে
চুলের আলোর রেশ।
তুড়ি
তুমি উড়িয়ে দিলে এক চুমুর পাখি,
আমি হয়ে গেলাম পাখির বৃক্ষ।
তুমি কেমনতরো যাদুকর!
তুড়ি মেরে
বানিয়ে ফেললে উদোম বৃক্ষ!
আমার শাখায়, পাতা আর ফুলে,
ফুল থেকে মূলে পাখিটি চালাচ্ছে তার নরম চঞ্চু
তোমাকে পাই না, সাত আসমান যেনো ভেঙে পড়ছে
পাখির ঠোঁটে।
তুমি চিত্রানদীর পাড়ে ধ্যানমগ্ন চুমুর পাখি
উড়িয়ে দিয়ে বাজিয়েই যাচ্ছো বাঁশি
ও কানাই, যাদুকর মারো তো আরো এক তুড়ি
অনুভূতি খানখান হয়ে, আমাকে
ভেঙেচুরে বেরিয়ে আসুক ভেতরে উতরানো
তপ্ত নদী…
শিকল
সবুজের সমারোহে আমি এক
ডানা ভাঙা নিঃস্ব ফড়িং
আকাশ ছুঁতে পারিনা
কারণ, আমি যে দলছাড়া মেঘের প্রতীক
জীবনের ক্যানভাসে আঁকা
বর্ণহীন কষ্টের অনুভূতি নিয়ে
শুষ্ক পাতার এক কান্নার প্রতিধ্বনি
নিরন্তর একলা বিকেলে
ধোঁয়া ওঠা এক কাপ চায়ের ধূসর প্রতিচ্ছবি হয়ে
লাখো শব্দের ভিড়ে
অদৃশ্য শিকলে বাঁধা পড়া
নিঃসঙ্গ একটি কবিতা…
বয়কট
আগুনের ডালপালা ছড়িয়ে গেলে রতির ভেতর
পোষায় না এতোটা আড়াল, শিকারী এক কোপে নামিয়ে ফেলো সুতোর জঙ্গল
বন চষেই শনাক্ত করেছো হরিণী, পৃথিবী তো মানুষেরই বন
চোখে দ্বিধা কাঁপে, চোখ খুলে রাখো
কোথায় বসাবে প্রণয়ের হাট?
এই প্রশ্নে ডুবে যাবে সূর্যদেবতা
জানো তো প্রকৃতিরও রয়েছে চোখ
দেয়ালও রটিয়ে দিতে জানে প্রেম আর ক্ষুধার গুঞ্জন
তুমি আমি প্রেম, কোটর থেকে খুলে রাখা চোখ
মানুষ, ঈশ্বর আরো যা আছে প্রেম আর কামশাস্ত্রে বয়কট, বয়কট…
ধনুর্ধর হরিণীর আকাঙ্ক্ষায় তাক করো তোমার শানিত তীর-ধনুক…
যৌথখামার
বুকটা খুলে দিয়েছি রুয়ে দাও ধানের চারা
আমাদের ভূমি নেই, পাঁজরে রয়েছে ভালোবাসা,
পাকস্থলীতে লাল আগুন, আগুনের ডাকনাম ক্ষুধা
আমরা মরেছি প্রেম আর আগুনের লালে
তুমি কৃষক হও আমি ভূমি হয়ে ফলাবো প্রেমগন্ধ ধান
প্রেমেই আমরা পূর্ণবান, একদিন আসবেই নবান্ন
ফসলের উৎসবে তুমি লিখো মাটির কবিতা,
চাঁদের ভেতর আমি আঁকবো কৃষকের ঘাম
আমাদের ভূমি নেই, নেই রক্তের কোন টান
উঠোন নেই সকালে লাল মোরগের ঝুঁটি কাঁপাবার
পৃথিবীতে আমরাই আমাদের প্রেম আর ফসলের যৌথখামার!
বুকের কুসুম
অলকানন্দা হয়ে ফুটে থাকি, হলুদ বলে ডাকো
বিরহও হলুদ হয়, যাকে প্রেম বলে জানো
তুমি তো প্রেমিক মাছি, ডুবে থাকো রঙে
আমারও আকাশ আছে, ঘুড়ি উড়ে বিষে
ঘুড়ির খোঁজ রাখো না তো, নাটাই ধরে টানো
টান লাগে মূলে আর টান লাগে বুকে
বুকের কুসুম তবুও হলুদ হয়ে থাকে!
সাক্ষ্য
তোমারই আগুনে পুনরায় জন্ম নেই ফিনিক্স
আমি তো কেবলা মুখি হয়ে আছি জন্ম জন্মান্তর
যেখানে তুমি সেই পাথর আর লেলিহান হাবিয়া
কখনো তুমি খঞ্জর হাতে দাঁড়িয়ে থাকো সিমার
তুমি আমাকে কতোবার বধ করবে হে পয়গম্বর?
নিজেকে স্বীকার করো ওগো আগুন, স্বীকার করো মিথ্যা খঞ্জর
আমার সেজদায় খোদার মতো জ্বলে ওঠো নূর
আমি তুর পাহাড়ের অঙ্গার নিয়ে সত্যের আয়নায়
দেখতে চাই তোমার মুখ
আর পৃথিবীকে সাক্ষ্য দিতে চাই নির্ভুল আমার সেজদা
বলতে চাই তুমিই আমার একমাত্র রুহের পয়গম্বর!