“প্লাটফর্ম যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকে একটা ভাঙ্গা ইটের রাস্তা সোজা চলে গেছে। যেটা ধরে মিনিট দশেক হাঁটলে একটা একটা বড়ো মাঠ দেখতে পাবেন। একসাথে তিনটে ফুটবল ম্যাচ হতে পারে এমন বড়ো। ওখানে গিয়ে জিজ্ঞেস করবেন সত্যসেবী সাহার কথা। দেখিয়ে দেবে”।
-এই স্টেটমেন্টটুকু সম্বল করে স্টেশনে নেমে গেছিলাম। নিঝঝুম স্টেশন। এলাইনে গাড়ি বেশি নেই। যা আছে মালগাড়ি আর এক্সপ্রেস। যেগুলো এখানে এসে স্পিড বাড়িয়ে দেয়।
স্টেশনের একমাত্র চাওলার কাছে এক ভাঁড় চা খেয়ে আর সিগারেটের প্যাকেট কিনে সত্যসেবী সাহার হদিশ পেলাম।
প্লাটফর্ম শেষ করে ভাঙ্গা রাস্তাটা পেয়ে গেলাম। সেটা দিয়ে সটান হাঁটা শুরু করলাম। চাদ্দিক ফাঁকা ফাঁকা। অনেক দূরে কিছু বাড়ী বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়িয়ে আছে নজরে পড়ে।
সত্যসেবী সাহা দশ বছর আগে এএসআই হয়ে রিটায়ার্ড পুলিশ থেকে। তার সাথে দেখা করতে আমার আসা।
একটা ছেলে সাইকেল চালিয়ে আমাকে কাটিয়ে বেরিয়ে গেল। ওকে ডাকলাম, “ও ভাই,শুনছো?” ছেলেটা সাইকেল থামিয়ে দাঁড়াতে বললাম, “সত্যসেবী সাহাকে চেন? ওর বাড়ি যাব”। ও বলল, “সেতো অনেকটা দুর!হেটে গেলে আধ ঘন্টা”। আমি অবাক হয়ে বললাম, “সেকি! স্টেশনের চায়ের দোকানে বলল যে দশ মিনিট!” ও হেসে বলল, “এদিকে এমনই বলে। আমি ওদিকেই যাব। আপনি আমার সাইকেলে উঠে পড়ুন।”
সাইকেলে যেতে যেতে আলাপ শুরু হল।
“জ্যাঠা কি আপনার আত্মীয়?”
“জ্যাঠা কে?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।
“সত্যসেবী সাহাকে আমরা জ্যাঠা বলি।”
“ও আচ্ছা। না,আত্মীয় না। আমার বাবার সহকর্মী ছিলেন।”
ছেলেটা সাইকেলের স্পিড কমিয়ে জিজ্ঞেস করল, “আপনার বাবাও পুলিশে ছিল?”
“হ্যাঁ, ওনার কিছু পুরনো পাওনা ছিল বাবার কাছে। সেটা মেটাতে এসেছি আর কি।” আমার কাঁধের ঝোলাটার দুলুনি কমাতে হাতে চেপে ধরলাম। দুলুনি কমলো। হাত দিয়ে স্পর্শ করলাম ভিতরের শীতল ধাতুটিকে…
অনেক বছরের চেষ্টায় খোঁজ পেয়েছি সত্যসেবী সাহার। অনেক পুরনো কেস। আর নামটা। ওটা আমার দশ বছর বয়স থেকেই মুখস্ত হয়ে গেছিল। কনস্টেবল সত্যসেবী সাহা। স্টেট আর্মড পুলিশ। আর মুখটা আজো ভুলিনি। লম্বা পেশীবহুল চেহারা,নিকষ কালো,সরু গোঁফ! সেই আমার প্রথম দেখা! শেষ দেখাও। আজকে আবার দেখা হবে। তখন আমার দশ। ওর প্রায় চল্লিশ। এখন আমার চল্লিশ।
“আপনার বাবার খুব কাছের বন্ধু ছিল জ্যাঠা?” সাইকেল চালকের প্রশ্নে আবার বর্তমানে ফিরে এলাম। বললাম, “হাঁ, তা খুব ভাল বন্ধু ছিল।”
“আপনি আসবেন জ্যাঠা জানেন?”
“নাহ,হঠাত করে চলে আসা আরকি।”
“খুব খুশিই হবেন। আর টাকাকড়িও কিছু পাবেন বুঝি?”
বললাম, হ্যাঁ।”
ছেলেটা সাইকেলের গতি বাড়িয়ে বলল, “ভালই হবে,টাকাপয়সা খুব দরকার।”
জিগ্যেস করলাম, “ওনার বাড়িতে আর কে কে আছেন?”
“কেউ আর রইল কই! জেঠিমা ছেলে সবতো মরেছে। ছেলের বৌটা শুধু আছে। সেটার কোনো যাবার জায়গা নেই বলে পড়ে আছে।”
“ছেলে,বৌ সব মারা গেছে! কিভাবে?”
“জেঠিমার ক্যান্সার হয়েছিল,বাঁচল না। আর ছেলেটা ভালোই ছিল,শক্তপোক্ত জোয়ান। সাইকেলে করে যাচ্ছিল,লরি পিষে দিয়ে যায়। সবে বিয়ে হয়েছিল তখন। তারপর থেকে জ্যাঠাও কেমন হয়ে গেল! এখন তো চোখে দেখেনা,কানে শোনেনা,বাতের ব্যাথায় পঙ্গু প্রায়। পেনশনটা আছে বলে খাওয়া জোটে। ”
আমি শুনে চলি সব কিছু। ত্রিশ বছর অনেকটা সময়। দুনিয়ায় কতো বদল হয়ে গেছে! রাস্তার দুপাশের গাছগুলোতে লাল আর তেরঙ্গা ঝান্ডা বাঁধা। সাইকেল চালক ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করলাম, “ এতো ঝান্ডা কিসের? কিছু ছিল?”
“সামনে পঞ্চায়েত ভোট আসছে, তার তোড়জোড় চলছে।”
“ও।” আমি বললাম।
ছেলেটা আবার বলা শুরু করল, “জ্যাঠাও তো পঞ্চায়েতের মাথা হয়েছিল চাকরি ছাড়ার পর। ছেলে মারা যাবার পর সব ছেড়েছুড়ে দিল।”
“তাই! কোন পার্টিতে ছিল?” আমি বেশ অবাক হই।
“লাল পার্টি করত। খুব প্রভাব ছিল। সবাই ভয় পেত। লাল,লাল চোখ আর হাতের কড়া পরা মোটা মোটা আঙুল। আমরা বাচ্চারা দেখেই ভয় পেতাম।
তখন আমার বছর দশেক বয়েস। গোটা রাজ্য অশান্ত। লাল ঝান্ডা হাতে গ্রামে গ্রামে লড়াই চলছে। বাবা জেলে। মা আমাকে নিয়ে কাকদ্বীপ শহরে এল। বড় মিছিল হবে। মায়ের পেটে তখন আমার একমাত্র ছোট ভাইটা…
“ নিন এসে গেছে আপনার জায়গা।” সাইকেল চালক একটা বাড়ির সামনে থামল। একতলা ছোট বাড়ি। সামনে এক চিলতে ফাঁকা জমি। বাড়িটা একসময় বেশ যত্ন করে শুরু হয়েছিল বোঝা যায়। দোতলার পিলার বাঁধা হয়েছিল,ঢালাই হয়নি। পিলারের রডে দড়ি বেঁধে একটা শাড়ি ঝুলছে। জানলা দিয়ে হালকা আলো। টিভির শব্দ ভেসে আসছে। দেয়ালে প্লাস্টার আছে রঙ নেই। পুরনো কাঠের দরজা। সামনে এসে দাড়ালাম। শিহরিত বোধ করলাম। দরজার ওপারে কনস্টেবল সত্যসেবি সাহা! এপারে আমি। আমার মা প্রয়াত অহল্যা হালদার। আমার দশ বছর বয়সে মা আমাকে ছেড়ে বিদায় নিয়েছিলেন। বা, আমার থেকে আমার মাকে,ভাইকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
আমি তখন ক্লাশ ফোর। তখনকার সব কথা আমার মনে আছে। সেদিনকার প্রতিটা মুহুর্ত আমি চোখ বুজলে আজো দেখতে পাই। আমার মায়ের পেটে আমার ভূমিষ্ঠ না হওয়া ভাই। এক হাতে মা আমার হাত ধরে ছিল, আরেক হাতে লাল ঝান্ডা। গোটা কাকদ্বীপ শহর সেদিন উত্তেজনায় থরথর করে কাঁপছে…
দরজায় কড়া নাড়তে ভিতর থেকে মহিলা কন্ঠ ভেসে এল। “কে?”
“ আমি সত্যসেবী সাহার সাথে দেখা করতে কাকদ্বীপ থেকে এসেছি।”
বৌটি অবাক হয়ে আমায় দেখতে লাগল। ওনাদের সাথে বোধহয় কেউ দেখা করতে আসেনা! ইনিই সম্ভবত সত্যসেবী সাহার ছেলের বিধবা। রুগ্ন চেহারার এক মহিলা। মাথার সিঁথিটা ফেলে আসা সাইকেল রাস্তার মতোই সাদা আর প্রশস্ত।
এবার সত্যসেবী সাহা দরজার কাছে এগিয়ে এলেন। ত্রিশ বছর পর দেখছি লোকটাকে! কোথায় সেই জম্পেশ চেহারা! অতবড় চেহারাটা এইটুকুন হয়ে গেছে কুঁচকে! মাথার চুল প্রায় নেই! না কাটা খোঁচা দাড়ি। কালো মোটা ফ্রেমের চশমার কাঁচগুলো আরো মোটা! চোখ আবছা লাগে! এর নাম বার্ধক্য!
আমার সারা শরীরে শীতকাঁটা দিয়ে উঠছে! কাঁধের সাইডব্যাগটা চেপে ধরলাম। ব্যাগের ভিতরের ভারি জিনিষটা আমার কোমর স্পর্শ করল।
“ কোথা থেকে এসেছেন? কি চাই?” প্রশ্নটা অনেক সেকেন্ড আগে করে উত্তরের অপেক্ষায় সত্যসেবী সাহা। আমি বাকরোহিত হয়ে তাকে দেখছিলাম। কথা হারিয়ে গেল আমার…
কাকদ্বীপের রাস্তায় কাতারে কাতারে মানুষ। শয়ে শয়ে পুলিশ কর্ডন করে রেখেছে রাস্তা। যেতে দেবেনা। কিন্তু মিছিল যাবেই। পুলিশ লাঠিচার্জ,টিয়ার গ্যাসের শেল চার্জ শুরু করল। জমায়েত ছিটকে যেতে লাগল। কিন্তু মানুষের মনে তেভাগার লড়াই। অত সহজে কি তারা পিছু হটে! তারাও রুখে দাঁড়াতে লাগল। হাতের কাছে যা পেল তাই ছুঁড়ে মারতে লাগল পুলিশের দিকে। অনেক পুলিশ গণধোলাইয়ের শিকার হল…
“ আমি কলকাতা থেকে এসেছি। আমার বাবা আপনার সহকর্মী ছিল। বাবাই আমাকে আপনার কথা বলল। এদিকে একটা কাজে এসেছিলাম। বাবা বলেছিল সময় পেলে যেন আপনার খবর নিয়ে যাই।” সত্যসেবী সাহা কিছুটা অবাক হয়ে আমার কথা শুনছিল। শোনা হয়ে গেলে বলল, “তোমার বাবার নাম কি?”
বললাম, “নিশিকান্ত মণ্ডল।”
“নামটা চেনা চেনা ঠেকচে,কিন্তু ঠাওর করতে পারছি না। এট্টু দাঁড়াও” বলে সত্যসেবী সাহা আবার ঘরে ঢুকল।
যে লোকটার ছবি এতদিন প্রাণপণ চেষ্টা করতাম মনে রাখার তার সাথে এখনকার লোকটার প্রায় কোনো মিল নেই। বার্ধক্য মানুষকে সর্বার্থে বদলে দেয়!
সত্যসেবী সাহা গায়ে একটা শার্ট গলিয়ে বেরিয়ে এল। হাতে লাঠি। বলল, “বাইরে গিয়ে বসি। ঘরে খুব মশা।” আমরা দুজনে মাঠের দিকে চললাম।
আমার সারা শরীর উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছে। দাঁতে দাঁত চেপে বসছে। মাথার রগদুটো টনটন করছে। আমার সাইড ব্যাগটা চেপে ধরে আমি সত্যসেবী সাহার সাথে হেঁটে চললাম।
মাঠের গায়ে একটা চায়ের দোকানে গিয়ে বসলাম। “চা আর বিস্কুট দে।” সত্যসেবী দোকানদারকে অর্ডার দিয়ে ব্যাটারির খোলে বসল।
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে লোকটা আমার মুখের দিকে খানিক চেয়ে বলল, “নিশিকান্ত মন্ডল? ও নামে কারুকে তো মনে পড়ছে না! কে জানে বয়স হচ্ছে সব কিছু ভুলে যাচ্ছি।”
আমি চাটা এক চুমুকে শেষ করে বললাম, “চলুন,মাঠে গিয়ে বসা যাক। এখানে বড্ডো ভিড়।” লোকটা আমার মুখের দিকে অবাক ভাবে চাইল। তারপর বলল, “ভিড়! ও! তা চলো তাহলে”।
আমরা দুজনে গিয়ে মাঠের যেদিকটা ফাকা সেখানে ঘাসের উপর বসলাম। মাঠটা বিরাট! দূরে দূরে আরও অনেকে বসে আছে। কেউ তাস খেলছে। কেউ বাচ্চাদের খেলাচ্ছে। কেউ বসে গল্প করছে। সুর্যের তেজ কমে যাচ্ছে। অস্ত যাবার সময় হচ্ছে…
সেদিনও শেষ বিকেলেই ঘটনাটা ঘটেছিল।
পুলিশ গুলি চালাতে শুরু করল এলোপাথারি। মা আমার হাত ধরে বড়ো রাস্তা থেকে নেমে মাঠের আল ধরে দৌড়াচ্ছিল। মা পারছিল না। পোয়াতি পেটে দৌড়ানো খুব কষ্টের সেটা দশ বছর বয়সেই জানতাম। আরো অনেকেই দৌড়ে পালাচ্ছিল। চারদিকে গুলির শব্দ! আর্তনাদ! বড়ো রাস্তায় কয়েকটা রক্তাক্ত দেহ ডিঙিয়ে আমি আর মা এসেছিলাম। মা বলছিল, “বাবু জোরে দৌড়া।” পিছনে দুটো পুলিশকে বন্দুক উঁচিয়ে তেড়ে আসতে দেখলাম। কিছুটা পর একটা পুলিশ গতি কমিয়ে দিল। কিন্তু আরেকটা পুলিশ খ্যাপা ষাঁড়ের মতো তাড়া করা থামালো না। আমি বারবার পিছু ফিরে দেখছিলাম লোকটা আর কত দূরে। মা বলছিল, “ পিছনে তাকাস না বাবু,দৌড়ো…”
“আপনার বন্দুকের নিশানা নাকি খুব ভাল ছিল? বাবা বলেছে।”
“আমার! তোমার বাবা বলেছে? কে জানে! আমার সেরকম কিছু মনে পড়েনা। পুলিশ ট্রেনিং এ তো সব কিছুই শিখতে হয়। সেরকমই শেখা। তবে খুব একটা চালাতে হয়নি।”
“আপনি মিথ্যে বলছেন। আপনি রাইফেল চালাতে খুব পছন্দ করতেন। গুলি চালানোর কেস থাকলে ডিপার্টমেন্ট আগে আপনাকে পাঠাতো। রুনুর এনকাউন্টার টিমেও আপনি তাই ছিলেন।”
সত্যসেবী সাহা ফ্যালফ্যাল করে আমার মুখের দিকে চেয়ে রইল খানিক। ওর মুখ দিয়ে লালাও ঝরে। তারপর বলল, “ এসবও তোমার বাবা বলেছে? কিন্তু আমি নিশিকান্ত মণ্ডল নামে কাউকে তো মনে করতে পারছি না।“
“ময়দানে ভ্যান থেকে নামিয়েও আপনি অনেককে মেরেছিলেন মনে আছে? আপনি একটা খুনি।” আমার সব সংযম ভাঙ্গতে শুরু করেছে। সত্যসেবী সাহা ওর মোটা ফ্রেমের ভিতর থেকে আমাকে অবাক দৃষ্টিতে দেখছে। মোটা কাচের পিছনে ওর চোখদুটো ঘোলাটে লাগছে। “সন্ধ্যে হয়ে গেছে,এবার আমায় ঘরে ফিরতে হবে” বলে লোকটা উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেই আমি ওর হাত ধরে আবার বসিয়ে দিয়ে বলি, “ চুপ করে বসুন এখানে। আমার কথা শেষ হয়নি।”
মা ক্রমশ নেতিয়ে পড়ছিল,তাই গতিও শ্লথ হয়ে আসছিল। আমি তাই আরো ভাল ভাবে পিছনে ঘাড় ঘোরাতে পারছিলাম। পুলিশটার মুখে একটা হাসি খেলে যাচ্ছিল! আরো প্রায় পঞ্চাশ মিটার দৌড়ে পুলিশটা থমকে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসলো। রাইফেলটা তাক করছে একটা চোখ বুজে। আমি চিৎকার করে মায়ের হাতে ঝাঁকুনি দিলাম, “ মা,গুলি করছে।” মা ঝটকা মেরে আমার হাত ছাড়িয়ে বলল, “বাবু পালা…”
সত্যসেবী সাহা অসহায়ের মতো ঘাসে ধুপ করে বসে পড়ল।
“অহল্যা হালদারকে মনে আছে?” আমার হাত ব্যাগের ভিতর ঢুকে গেল।
“ কে অহল্যা হালদার? নাম শুনিনি কখনো।” লোকটা মনে করার চেষ্টা করছে মুখ দেখে মনে হল। “ ত্রিশ বছর আগে যে পোয়াতি বউটাকে আপনি কাকদ্বীপে গুলি করে মেরেছিলেন।”
“আমার ছেলের বৌটাও কলপাড়ে পা পিছলে পড়ে বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেললো” বলতে বলতে সত্যসেবী সাহা আনমনা হয়ে নিজের বাড়ির দিকে চেয়ে রইল।
থ্রি নট থ্রি বুলেটটা মাকে ছ্যাঁদা করে বেরিয়ে গেছিল। মা ধপাস করে মুখ থুবড়ে পড়ার আগে শেষ কথাটা বলেছিল,”পালা…” আমি দৌড়ে পালাতে পালাতে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখেছিলাম মাটিতে পড়ে মায়ের পেটটা ব্লাডারের মতো ফেটে গলগল করে রক্ত বেরিয়ে যাচ্ছিল…
“অহল্যা হালদার আমার মা। আপনি আমার মাকে খুন করেছিলেন। মায়ের পেটের ভাইটাকেও আপনি খুন করেছিলেন। এতো বছর ধরে আমি আপনাকে খুঁজে বেরিয়েছি।”
“কেন! খুঁজে বেরিয়েছো কেন! কত পুলিশই তো আছে। কত গুলি,কত রাইফেল। খোঁজার কি আছে! আমার জোয়ান ছেলেটাকে যে লরিওলা পিষে মেরেছিল আমি তো তার খোঁজ করিনি। কতো লরি,কত ড্রাইভার।” বলতে বলতে লোকটা আবার উঠে দাঁড়াল। আমি ব্যাগ থেকে আমার ওয়ান শটারটা বের করে বললাম, “চুপ করে দাঁড়ান,কোথাও যাবেন না।” সত্যসেবী সাহা আমার হাতের দিকে চেয়ে বলল, “ওটা লক করা আছে” …
সুর্য ডুবে গেছে প্রায়। গোটা মাঠ জুড়ে লালের আভা। মাঠে খেলতে আসা বাচ্ছাগুলো বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। বাসায় ফিরছে ঝাঁকে ঝাঁকে সাদা বকের দল।
দূর থেকে সত্যসেবী সাহার মরা ছেলের বৌয়ের ডাক শোনা গেল, “ মুড়ি মেখেছি বাবা” …